আজ || রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
শিরোনাম :
  গোপালপুরে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা       ধনবাড়ি মডেল প্রেসক্লাবে সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদ ও দোয়া       গোপালপুরে মরহুম আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট       টাঙ্গাইল-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী শাকিল উজ্জামান       গোপালপুরে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ       গোপালপুরে শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন সালাম পিন্টু       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ       গোপালপুরে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই শহীদ দিবস পালিত       গোপালপুরে বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল       গোপালপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় ১২ মামলার আসামি চাকমা জাহাঙ্গীর নিহত    
 


অনুগল্প- “ফ্রিমাইন্ডের অশান্তি”

: মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম :
নাজিয়া খাতুন। খুবই ধার্মিক মহিলা। ধুমধাম আয়োজনে বড় ছেলে রাফিকে বিয়ে করান পাশের গ্রামের সুন্দরী এক কন্যা দেখে। পুত্রবধুকে ঘরে তুলেন সাত রঙে সাজিয়ে।
সুন্দর পরিবার গড়ার স্বপ্নে চার সদস্য পরিবারের লাগাম ধরে নতুন বউ ফাহিমার দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। স্বামীর ছোট ভাই রাব্বি ছাড়া সংসারে দ্বিতীয় পুরুষ বলতে কেউ নেই ফাহিমার। রাব্বি ক্লাস নাইনের ছাএ। বিয়ের এক বছর পর স্বামী রাফি বিদেশে চলে যান। ফসলের জমি বিক্রি করে ভিসার মুল্য পরিশোধ করেন। স্বামী প্রবাসে যাওয়ার পর ফাহিমা বাহিরের আনুষঙ্গিক কাজ দেবর রাব্বিকে দিয়ে সম্পাদন করান। দৈনিক বাজারসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু দেবর রাব্বি হাসি মুখে করে দেয়। সাংসারিক কাজে দেবরের সাথে কথাবার্তা, তার সামনে চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া এক সঙ্গেই হয়।
একজন সাবালক দেবরের প্রতি যতটুকু আগলে চলা দরকার সেটুকু করেননি ফাহিমা। কলেজের সহপাঠী অনেকেই জানে রাব্বির বাড়িতে তার ভাবী রয়েছে। এজন্য কিছু বিকৃত মানুসিকতার সহপাঠী একআধটু তামাশা এবং উস্কানিও দেয় ভাবীর সাথে ইয়ারকি আড্ডা মারতে। সহপাঠীদের উস্কানিতে বাড়িতে এসে সে ভাবীকে নিয়ে গান-গল্পে সারাক্ষণ মেতে থাকে। ফাহিমা বাধা দিলে রাব্বি ফ্রিমাইন্ড বলে উড়িয়ে দেয়। বয়সের ভারে বৃদ্ধা মা নজিয়া খাতুনের এদিকে তেমনটা দৃষ্টি নেই। রাব্বিও বিভিন্ন মেলা এবং শপিংমল থেকে বিভিন্ন রকমের উপহার ভাবীকে দিয়ে মন জয়ের অবিরত চেষ্টা চালায়। এক সময় ভাবী নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দেবরের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ মায়ের নজর এড়িয়ে এক পর্যায় দু’জন পাপের জগতে হারিয়ে যায়। রাব্বির ও তার ভাবীর ফষ্টিনষ্টি আশেপাশের অনেকে দেখে। একদিন হঠাৎ ভাবী ফাহিমা অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তারী পরিক্ষায় ধরা পড়ে- তার গর্ভে সন্তান।
পাপের ফসল হিসাবে একটি সন্তানের জন্ম হয়। পুরো গ্রামে হৈচৈ পড়ে যায়। গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ লোকজন একত্রিত হয়ে পরামর্শ করেন, কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। মা নজিবা খাতুন প্রবাসী ছেলে রাফিকে চিঠিতে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত বাড়িতে আসতে অনুরোধ করে। রাফি চিঠি পেয়ে তাড়াহুড়া করে বাড়ি ফিরে সকল ঘটনা শুনে নির্বাক হয়ে যায় এবং ক্ষোভে সে ফাহিমাকে তালাক দেয়। সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের গুণীজনরা বিচারে যে রায় দিবেন, সে তা মেনে নিবেন। নির্ধারিত দিনে গ্রামে সালিশ বৈঠকের রায় ঘোষিত হয়, রাফির পরিবারের মানসম্মানহানির জন্য ফাহিমাকে দু‘লক্ষ টাকা জরিমানা ও গ্রামছাড়া করা হবে আর অভিযুক্ত রাব্বিকে বেত্রাঘাতের মাধ্যেমে শাস্তি প্রদান করা হবে। বিচারের রায় সবাই মেনে নেয়।
রাফি মানুসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ভাবতে থাকে এটা কি হয়ে গেল! অশান্তির কালো নখের থাবায় পড়ে সংসার লন্ডভন্ড হয়ে গেল। সামাজিক ভাবে লান্ঞ্ছনা ও অপমানের শিকার কেন? নিশ্চয়ই কোথাও ভুল আছে। সে ভুল কোথায়? ধর্মীয় বিধানের আলোকে দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা না করার ফলেই এই শাস্তি পেলাম।
রাফি ফজরের আজান শুনে মসজিদে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর দরবারে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হলো। এবং বুঝতে পারলো- আজকের দিনের ফ্রিমাইন্ড আর বেপর্দার জন্য অন্তরালের ভয়াবহ অশান্তি।

লেখক:
শিক্ষার্থী, মাদরে ইলমি দারুল উলূম দেওবন্দ, ভারত।

মন্তব্য করুন -


Top
error: Content is protected !!